অসহায় ফিলিস্তিনবাসী
নিশ্চুপ পশ্চিমা গনমাধ্যমঃ
"পবিত্র লাইলাতুল-কদর ও জেরুজালেম দিবস" এর দিনে ফিলিস্তিনিবাসীদের উপর এই হামলায় আহত হয় ৩০০ জনের বেশি মানুষ। মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আন্তর্জাতিকভাবে এই ঘটনা নিন্দিত হলেও পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো যেন এ ব্যাপারে একপাক্ষিক ভূমিকা পালন করে চলেছে। ফিলিস্তিনিদের নির্মম পরিহাসের গল্পগুলো বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে তারা যেন নারাজ। তার উদাহরণস্বরূপ আমরা দেখতে পারি, আল-আকসা মসজিদে নামাজরত মুসলমানদের উপর ইসরায়েলি হানাদার বাহিনীর তাণ্ডবে "এএফপি" তাদের শিরোনামে লিখেছে, "জেরুজালেমে নতুন সংঘাতে শত শত হতাহত: জরুরী সেবাদাতা সংস্থা"। এখানে কোথাও উল্লেখ নেই হামলাটি ছিল ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা, যেখানে ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতায় আহত হয় নিরপরাধ ফিলিস্তিনবাসী। খবরটা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, হতাহতের সংখ্যায় শতকরা ৯৮ থেকে ৯৯ জন ছিল ফিলিস্তিনি। এই ব্যাপারটা তারা তাদের শিরোনামেই প্রকাশ করতে পারতো।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এডওয়ার্ড সাঈদ ১৯৮৪ সালে একবার বলেছিলেন " ফিলিস্তিনিদের কোনো কিছু বলতে মানা"। সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার অধ্যাপক এবং লেখক মাহা নাসের দুটি দৈনিক এবং দুটি সাপ্তাহিক পত্রিকার উপর গবেষণা চালিয়েছেন। নিউইয়র্ক টাইমস এবং ওয়াশিংটন পোস্ট এই দুটি দৈনিক এবং দ্যা নিউ রিপাবলিক ও দ্যা নেশন এই দুটি সাপ্তাহিকের ১৯৭০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত সকল মন্তব্য পর্যালোচনা করে মাহা নাসের বলেছেন এসব পত্রিকার সম্পাদকীয় পর্ষদ এবং কলামিস্টরা সম্ভবত আগে থেকেই নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, ফিলিস্তিনিদের সমস্যা নিয়ে তারা কিছু লিখবেন না। তারা যেন ফিলিস্তিনিদের কথা শোনার প্রয়োজনই মনে করেননি।
পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো যেন সমন্বিতভাবে ফিলিস্তিনবাসীদের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। ইসরায়েলের হামলায় নারী-শিশুসহ শতশত বেসামরিকের মৃত্যুর পরে যখন গাজা থেকে হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলের দিকে রকেট ছুড়লো, সেই ছবি পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে ভয়াবহভাবে প্রচারিত হলো। হামাসের ছোড়া রকেটগুলোকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেন সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত করলেন। মন্তব্য করলেন ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। কিন্তু নিরীহ ফিলিস্তিনবাসীদের উপর ইসরায়েলি বর্বরতা নিয়ে তিনি ছিলেন নিশ্চুপ।
"মিডিল ইস্ট আই" নামের একটি অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত ফয়সাল হানিফের "আল-আকসা অ্যাট্যাকস: হাউ দ্যা মিডিয়া গিভস ইসরায়েল আ ফ্রি পাস" লেখাটি পড়লে অনেকটাই বোঝা যায় যে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো চুপ থেকে যেন ইসরায়েলকে মানুষ মারার সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছে। এমনি এএফপি, রয়টার্স, এপি এর মতো বিশ্বের প্রধান তিনটি বার্তা সংস্থা ইসরায়েলি বর্বরতার খবর চেপে যেন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
ইসরায়েলি হামলায় ঘরহারা হয়েছেন প্রায় ৫৮ হাজারের ও বেশি ফিলিস্তিনি। তবুও পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো যেন এক হয়ে আছেন ইসরায়েলের সাথে। যেখানে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেন কে একাই তোপের মুখে ফেলেছেন ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত আইন প্রণেতা রাশিদা তালিব। সেখানে কেন সংবাদমাধ্যমগুলো সংঘবদ্ধ হয়ে এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন না?
জাতিসংঘসহ বিশ্বের অনেক রাষ্ট্র এ নির্মম সংঘর্ষ বন্ধের আহবান জানিয়েই চলেছে। তবু ইসরায়েলি এ হামলা যেন থামবার নয়।হামলা, ধ্বংসযজ্ঞ যেন বেড়েই চলেছে। অথচ বিশ্বের সব মুসলিম নেতারা মুখ বুজে আছেন। তারা যেন তাদের নিজেদের রক্ষায় ব্যস্ত। মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার নেতাদের মানবতা আজ কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে!
পশিমা গণমাধ্যমগুলো যেন ভুল শিরোনাম তৈরীতে দক্ষ ভূমিকা পালন করেন। ইরানের সাবেক রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আহমাদিনেজাদ ১০ বছর আগে একবার৷ বলেছিলেন, "জেরুজালেম দখলকারী ইসরায়েলের সরকারকে সময়ের পাতায় বিলুপ্ত হতে হবে"। অথচ পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম এটিকে ভুল অনুবাদ করে প্রকাশ করেন " ইসরায়েলকে অবশ্যই মানচিত্র থেকে মুছে ফেলতে হবে"। এমন অনেক সত্য তাদের মাধ্যমে বিকৃত হয়ে অন্যরুপ ধারণ করে নেয়। এসব ঘটনা থেকেই বোঝা যায় তাদের পক্ষপাতপূর্ণ সাংবাদিকতা।
বর্তমানে সোস্যাল মিডিয়া লক্ষ্য করলে দেখা যাচ্ছে গাজার শতশত বাসিন্দা জানিয়েছেন, বর্তমানে ইসরায়েলি বোমার যে ধ্বংসযজ্ঞ তা নজিরবিহীন। এটি ২০১৪ সালের অভিযানের চেয়েও ভয়াবহ। অথচ সংবাদমাধ্যমগুলো প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলা শুরু হয়েছিল ইসরায়েলের ভেতরে হামাসের রকেট এসে পড়ার পরে। তাদের কেউ যেন আল-আকসা মসজিদে হামলার ঘটনাটি তুলে ধরতেই নারাজ। ইসরায়েলিদের এই কৌশলগত হামলা যেন ফিলিস্তিনিদের তাদের পবিত্রভূমি থেকে বিতাড়িত করা। আল-আকসা এবং পূর্ব জেরুজালেমের মানুষেরা এখনো তাদের মাটি আঁকড়ে বসে আছে এই বিশ্বাসে যে, তারা মনে করেন শহরটি হারালে তাদের স্বাধীন দেশের স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর একত্র হয়ে নিরপেক্ষভাবে বিশ্বের কাছে ফিলিস্তিনিদের অসহায়ত্বের চিত্র প্রকাশ করা উচিৎ। ধর্ম বা জাতির পক্ষ পাতিত্ব না করে সবাইকে মানুষ হিসাবে বিবেচনা করে হলেও এই বর্বরোচিত হামলার নিন্দা জানানো উচিত ছিল বড় সংবাদ মাধ্যম গুলার।