মা রা যেভাবে তাদের সন্তানদের ভালোবাসা দিয়ে বড় করে তোলে তার গুরুত্বপূর্ণ অপরিসীম। বাবা মাই পৃথিবীর মাত্র ২ জন মানুষ যারা নিজের কষ্ট করতে হলেও তার সন্তানকে কষ্ট দিতে চান না। তারাই শুধু চান যে তাদের সন্তান তাদের থেকেও বেশি সাফল্য অর্জন করুক। তেমনি এক সংগ্রামের গল্প রোজিনা আখতারের।
রোজিনা আখতারের বিয়ে হয়েছিল অল্প বয়সে। রোজিনার বিয়ে হয় একজন নিরাপত্তাকর্মীর সংগে। ২০০০ সালে সংসারে বারতি খরচ জোগাতে বিজিএমইএ ইন্সটিটিউট অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেক্নোলজিতে পরিচ্ছন্নকর্মী হিসাবে কাজ শুরু করেন তিনি।তার প্রথম সন্তানের জন্ম তার চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগেই হয়। তিনি যখন চাকরি শুরু করেন তখন তার প্রথম সন্তানের বয়স মাত্র ৩ মাস। ঘরে মাত্র ৩ মাসের বাচ্চাকে রেখেই কাজ করতে যেতেন তিনি।
রোজিনার পড়ালেখা প্রাথমিক স্কুলের গোন্ডি পেরতেই বন্ধ হয়ে গেছিল। রোজিনার কর্মস্থল বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট থেকে ইউনিভার্সিটিতে পরিনত হয়েছে। রোজিনা খুব আনন্দিত ছিলেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ পেয়ে। সেখান থেকে তিনি উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা অনেক কাছে থেকে দেখতে পেরেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জিজ্ঞেস করতেন যে তারা কোন বিষয়ে পড়ালেখা করছে, ভবিষ্যতে কোন বিষয়ে চাকরির খাত বেশি তৈরি হবে বা কোন বিষয়ে পড়লে কর্মক্ষেত্রে সুবিধা হবে। রোজিনা জানান যে তিনি আসলে নিজের সন্তানদের জন্য এইসব শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শুনতেন। তিনি নিজে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সবসময়ই চেতেন যে তার সন্তানরা যেন শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয়।তারা যেন শিক্ষা অর্জন করে দেশের জন্য কিছু করতে পারে।
সন্তানদের লেখাপড়া করানোর স্বপ্ন পূরন হয়েছে রোজিনার। রোজিনা যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসাবে কাজ করেন সেই বিশ্ববিদ্যালয় (বি জি এম ই এ ইন্সটিটিউট অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি) তে বড় ছেলে রায়হান আহমেদ ও মেয়ে তানিয়া আক্তার এমবিএ করছে। তার ছোট মেয়ে নুপুর ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রী। সে নরসিংদীর রায়পুরা কলেজে পড়ে।
রোজিনা আক্তার অনেক কম আয়ের চাকরি করে তার তিন সন্তানের লেখাপড়া চালিয়েছে। এর পেছনে রয়েছে তার ২১ বছরের সংগ্রামের গল্প।রোজিনা এ বিষয়ে স্মৃতিচারন করে জানান যে, তার ছেলে মেয়েদের মানুষ করতে তার অনেক লোকের অনেক কথা শুনতে হয়েছে, অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। তিনি যখন তার ৩ মাসের ছেলেকে ঘরে রেখে কাজ করতে চলে যেতেন তখন সেটা কেউ ভালো চোখে দেখত না। রোজিনা আরো জানান যে তিনি যখন ভালো কোন প্রতিষ্ঠানে তার সন্তানদের পড়াতে চেয়েছেন তখন লোকজন বলেছে, এত ছোট একটা চাকরি করে এত কষ্ট করে সন্তানদের লেখাপড়া করায়ে কি লাভ হবে?
এর মধ্যে অনেকেই তার মেয়েদের লেখাপড়া শেখাতে অনুৎসাহিত করেছে। তারা তার মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর আগেই বিয়ে দিয়ে দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছে। তবে তিনি এইসব পরামর্শে বিচলিত হন নি। তিনি নিজ গতিতে সংগ্রাম করে গেছেন।
রোজিনা আখতার জানান যে, মানুষের কথায় বা পরামর্শে তিনি থামেন নি। তিনি তার বাসার টেলিভিশন বিক্রয় করে তার মেয়ের লেখা পড়ার খরচ চালিয়েছেন। লেখা পড়া অল্প করার জন্য তিনি জীবনভর তার খারাপ ফল ভোগ করেছেন। তাই মা হিসাবে তার উদ্দেশ্য ছিল যেন তার সন্তানরা একই কষ্টের শিকার না হয়।
রোজিনা আখতারের মায়ের বাড়ি নরসিংদীতে। রোজিনা ইসলামের মায়ের বাসায় অর্থাৎ নিজেদের নানির বাসায় থেকেই তার প্রথম ২ সন্তান এইচ এস সি পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়।